1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. বিনোদন
  6. তথ্যপ্রযুক্তি
  7. সারাদেশ
  8. ক্যাম্পাস
  9. গণমাধ্যম
  10. ভিডিও গ্যালারী
  11. ফটোগ্যালারী
  12. আমাদের পরিবার
ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪ , ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোদাগাড়ীর প্রাণবন্ত মায়াবী ধান সিঁড়ি এলাকার জনপদ

আরিফ হোসেন
আপলোড সময় : ০৮-০১-২০২৩ ০৬:৩২:৫৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-১১-২০২৩ ০২:৩০:১৮ পূর্বাহ্ন
গোদাগাড়ীর প্রাণবন্ত মায়াবী ধান সিঁড়ি এলাকার জনপদ
আরিফ হোসেন (সম্পাদকীয়):  দিগন্ত ছোঁয়া প্রান্তর জুড়ে যেন ধান কন্যার কাব্যগাথা অফুরন সবুজের রাজ্যে নিত্য দোল খায়  দখিনা বাতাস, সোনাই বরেন্দ্রভূমির অসহ্য গাঁথা। মন রাঙানো বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীর গোদাগাড়ী। গোদাগাড়ীর প্রাণবন্ত ধানপ্রান্ত চোখ জুড়িয়ে যায় ভালোলাগায়। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজের এই মাখামাখি সবই বরেন্দ্রভূমির অবদান।
​​​​​
​​​বরেন্দ্রভূমি দেশের সবচেয়ে বড় মায়াবী শস্যখেত।
উত্তরবঙ্গের প্রাই ৭৭৭০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বরেন্দ্রভূমির একাংশ বুকে নিয়ে শস্য-শ্যামল এই গোদাগাড়ী । রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে । সম্রাট অশোকের আমলে আদি বাসিন্দাদের নাম অনুসারে এই ভূমির নাম ছিল পারিডাঙ্গন কালের প্রভাবে পারিডাঙ্গন থেকে বারিন্দ্রা , বারিন্দ্রা থেকে হয় বরেন্দ্র। পুরান কাহিনী মতে এই ভূমি দেবরাজ ইন্দ্রের বর্ধন্য তাই বরেন্দ্রভূমি। বরেন্দ্রভূমি গড়ে উঠেছে প্লাসটোসিন অধিযুগে প্রাচীন পলিমাটিতে । প্লাবন সমভূমির তুলনায় এই বরেন্দ্রভূমি গড়ে ৬ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু এ কারণে বরেন্দ্রভূমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় না।

বিস্তীর্ণ সমতলভূমির পাশাপাশি গোদাগাড়ীর ভূমি রূপে কোথাও কোথাও বৈচিত্র এনেছে টিলা টক্করের মত উঁচু ধাপ জমিন। এখানকার জমিগুলো সিড়ির মত ধাপে ধাপে বিননাশতো । ধান ই বেশি ফলানো হয় এখানে। স্থানীয়রা তাই নাম দিয়েছে ধানসিঁড়ি ক্ষেত। উর্বরতা বেশি হওয়ায় এই ধানসিঁড়ি জনপদ এখন হয়ে উঠেছে উদ্বৃত্ত শস্য এলাকা ।

কবি জীবনানন্দ দাশ মুগ্ধ হয়েছিলেন ধানসিঁড়ি নামক নদীর মায়ায়। গোদাগাড়ীর এই ধানসিঁড়ি প্রান্তরও কম মায়াবী নয়। একে তো উর্বর জমি তার ওপর জল সেচের ব্যবস্থা। ফসল ফলানোর আয়োজনটা গোদাগাড়ীতে অন্য জনপদের চাইতে বেশি। ফসলের মাঠে কৃষাণের চেয়ে সংখ্যায় এগিয়ে আছে কৃষাণীরা। কৃষাণি হিসেবে বাঙালিদের চেয়ে ক্ষুদ্রনি গুষ্টির নারীরা চোখে পড়ে এখানে বেশি।

এই উপমহাদেশে অন্যতম আদি বাসিন্দা সাঁওতালরা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ও কৃষি সংস্কৃতির জনক ও ধারক হিসেবে স্বীকৃত সাঁওতালরা। এখানকার সাঁওতালরাও কৃষির সাথে বেঁধে রেখেছে জীবন ও জীবিকার গাতছড়া। ধান রোয়া থেকে শুরু করে ধান কাটার পর আটি বাধা পর্যন্ত সব কাজ করে থাকে এখানকার সাঁওতাল আদিবাসিরা। পরিশ্রমী বলে সাঁওতালদের যে সুনাম তা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেলায় বেশি প্রযোজ্য।

৪৭২ বর্গকিলোমিটার আয়াতনের এই গোদাগাড়ীতে আবাদি জমি প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর। ফসলি জমিতে জলসেচ দেওয়ার এমন অবকাঠামো শুধু বরেন্দ্র জনপদে চোখে পড়ে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জোগান দেওয়া ভূগর্ভের পানি ঘণ্টাপ্রতি ১০০ টাকায় কিনে গোদাগাড়ীর চাষীর জমির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।

শুধু বরেন্দ্রভূমির ভু বৈচিত্রময় নই জীবন ধারার বৈচিত্র কম নয় এই গোদাগাড়ীতে। অন্য ঘড়ানের জীবন আছে নিমঘুটু নামের এই সাঁওতাল গ্রামে। সাঁওতালদের এই গ্রামটি পড়েছে গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নে, এই গ্রামে সাঁওতাল  পরিবার আছে প্রায় ১০০ টি। সমতলবাসি সাঁওতালরা প্রোটো অস্ট্রোলয়ের জাতিগোষ্ঠীর উত্তরপ্রজন্ম। বংশ-পরমপনার ঐতিহ্য সাঁওতালরা শিল্পী মনা অবসর পেলেই বানায় হস্ত শিল্পের এটা ওটা।

সাঁওতালদের আদি নিবাস ছিল ভারতের উড়িষ্যা, বিহার ও ছোটোনাগ পুরে কবে ওরা বাংলাদেশে বসতি শুরু করেছিল ঠিক করে বলা মুশকিল। তবে ওরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যা এসেছে ১৮৪০থেকে ১৯৪০ এই ১০০ বছরে । কালের ধারাবাহিকতায় তারা এখন এ জনপদের আসল বাসিন্দা। সহজ-সরল স্বভাবের সাঁওতালরা যে আসলেই শিল্পী মনা সেটা বোঝ যায় তাদের নকশা আঁকা ছিমছাম ঘরবাড়ি দেখে।

গোদাগাড়ীর ছায়াঢাকা মায়ামাখা বাঙালি জনপদের গ্রামগুলো মন ভরিয়ে দেই  জীবন ধারার রঙ,রূপ ও রসে। গোদাগাড়ী ৯ টি ইউনিয়নে ৩৯৬ টি মতো গ্রাম। এই গ্রামটির মত প্রতিটি গ্রামে স্নিগ্ধ ছড়ায় বাঙালি জীবনধারার চিরন্তন ছবি। গায়ের বধূ জানালেন বিয়ের লাল শাড়িটির মত তার জীবনও জড়িয়ে গেছে ভালোলাগা এ গ্রামের সাথে। উত্তরবঙ্গের এ প্রান্তিক জনপদ  বরেন্দ্রভূমি গোদাগাড়ী জীবনধারার ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ।

এখানে এলে বোঝা যায় বৈচিত্রের রঙ, রুপ, মোহনায় আসলেই অনণ্য এই  গোদাগাড়ী বরেন্দ্রভূমি জনপদ ও তাদের জীবনধারার বৈচিত্র।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Daily Sonali Rajshahi

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ